Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বিষমুক্ত গুড় উৎপাদন

বাজারে সোনালি, হালকা লাল, চকচকে, উজ্জ্বল সাদাটে গুড় দেখে সবাই আকৃষ্ট হয়। কিন্তু এই গুড়েই যে হাইড্রোজ নামক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে তা আমরা অনেকেই জানি না। আখের, খেজুর, তালের ও গোলপাতার রসের গুড়ের রঙ হাইড্রোজ দিয়ে আকর্ষণীয় সোনালি করা হয়। হাইড্রোজ দেয়া গুড় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হাইড্রোজ ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সহজেই কম খরচে ঢেঁড়স, শিমুল, বনঢেড়ঁসের ও  ঘৃতকুমারীর রস দিয়ে গুড় পরিষ্কার করা যায়। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট।
 
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে, জনপ্রতি প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫.৬২ গ্রাম, গুড়-চিনি খাওয়া উচিত। এ হিসেবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য বার্ষিক প্রায় ২০ লাখ টন চিনি-গুড় প্রয়োজন। কিন্তু দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩.৫-৪ লাখ টন গুড় ও ১-১.৫ লাখ টন চিনি উৎপাদন হয়। দেশে উৎপাদিত আখের প্রায় ৫০ ভাগেরও অধিক গুড় উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। খেজুর ও তালের রস থেকে প্রতি বছর প্রায় ০.৩ -০.৪ লাখ টন গুড় উৎপাদন হয়। চিনি কলে আখের দাম কম বলে আখচাষিরা গুড় তৈরিকারকদের কাছে আখ বিক্রিতে আগ্রহী বেশি।
 
গুড়ে পুষ্টি বেশি  
দেশে চিনির চেয়ে গুড়ের চাহিদা বেশি। চিনির চেয়ে গুড়ে পুষ্টি বেশি। গুড়ে সুক্রোজ, আমিষ, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ক্যারোটিন, রাইবোফ্ল্যাবিন ও নিয়াসিন থাকে। চিনিতে থাকে শুধু সুক্রোজ ও সামান্য আয়রণ। তালিকায় তা উল্লেখ করা হলো-
 
খাদ্য উপাদান    আখের গুড়    খেজুরের গুড়    তালের গুড়    চিনি
আমিষ (গ্রাম)          ০.৪    ১.৫    ১.০    -
চর্বি  (গ্রাম)            ০.১    ০.৩    ০.১    -
খনিজ লবণ  (গ্রাম)    ০.৬    ২.৬    ১.৮    ০.০২
শর্করা (গ্রাম)           ৯৫.০    ৮৬.১    ৯৬.৫    ৯৯.৭
ক্যালসিয়াম (মি.গ্রাম)  ৮০.০    ৩৫৩.০    ২২৫.৫    -
ফসফেট (মি.গ্রাম)      ৪০.০    ৩৬৩.০    ৪৪.০    -
আয়রন (মি. গ্রাম)     ১১.০৪    ৬২.০        ০.৯৮
ক্যারোটিন    ১৬৪.০    -    -    -
রাইবোফ্লাবিন (মি.গ্রাম)  ০.০৪    -    -    -
থায়ামিন (মি. গ্রাম)      ০.০২    -    -    -
নিয়াসিন (মি. গ্রাম)      ০.৫    -    -    -
 
আখের জাত
দানাদার গুড় উৎপাদনের জন্য পরিপূর্ণ পরিপক্ব আখ প্রয়োজন। উপযোগী জাতগুলো হলো- ঈশ্বরদী ১৬, ঈশ্বরদী ২৬, ঈশ্বরদী ৩০, ঈশ্বরদী ৩৩, ঈশ্বরদী ৩৮। প্রচলিত আখ মাড়াইকলের রস আহরণ ক্ষমতা ৪৫-৫০ ভাগ। বাংলাদেশে ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত উন্নত আখ মাড়াইকলের রস আহরণ ক্ষমতা প্রায় ৬০ ভাগ।
 
হাইড্রোজের ক্ষতিকর প্রভাব  
সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড বা সোডিয়াম ডাই থায়োনেট বাণিজ্যিকভাবে ব্লস্ককিট, রেডো রঙ্গালাইট বা হাইড্রোজ নামে পরিচিত। রঙ সাদা, তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ ও শক্তিশালী বিজারক পদার্থ। ইহা কোনো কিছুর রঙ খুব দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে। হাইড্রোজ খাদ্যে ব্যবহারের অনুমতি নেই। ইহা পেপার মিল, বস্ত্রমিল এবং তৈরি বস্ত্রের রঙ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ এলাকার গুড় প্রস্তুতকারীরা ফুটন্ত রসে হাইড্রোজ ব্যবহার করে গুড়ের আশানুরূপ রঙ না পাওয়ায় উত্তপ্ত প্রস্তুত গুড়ে সরাসরি মাত্রাতিরিক্ত হাইড্রোজ ব্যবহার করে। ফলে হাইড্রোজের ক্ষতিকর মাত্রা পুরোটাই যৌগ হিসেবে গুড়ে থেকে যায়। ইহা মানবদেহের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। যেমন- ক্যান্সার, আমাশায়, অন্ত্রের প্রদাহ ও অন্যান্য গ্যাস্ট্রো ইউরিনাল সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। হাইড্রোজ দেয়া গুড়ের স্বাদ ও গন্ধ ভিন্ন, গুড় দানা হয় না, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এসব সমস্যা দূর করার জন্য ভেষজ নির্যাস ব্যবহার করা প্রয়োজন।
 
গুড় পরিশোধনের ভেষজ নির্যাস তৈরি ও প্রয়োগ  
বিভিন্ন কারণে গুড় পরিশোধন করা কঠিন। কারণগুলো হলো- রোগ ও পোকা আক্রন্ত আখ, অপরিপক্ব বা অধিক  পরিপক্ব আখ, রসে অধিকমাত্রায় গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ, আখের জাত, রস জ্বাল দেয়ার ভুল পদ্ধতি ইত্যাদি। এসব কারণে উন্নতমানের দানাদার গুড় উৎপাদন সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় গুড় প্রস্তুতকারকরা গুড়ের রঙ দ্রুত পরিবর্তনের জন্য অতিমাত্রায় রাসায়নিক পরিশোধক দ্রব্য হাইড্রোজ ব্যবহার করে। ইহা মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই রস পরিশোধনের জন্য ঢেড়ঁস গাছের কাণ্ড বা শিমুল গাছের শিকড় বা বন ঢেঁড়সের কা- বা ঘৃতকুমারীর রস ব্যবহার করা হয়। ৫০০ গ্রাম বনঢেঁড়স গাছের কাণ্ডের সবুজ অংশ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ও থেঁতলিয়ে ২ থেকে ২.৫ লিটার পানির মধ্যে দুহাতে ১০-১৫ মিনিট ঘষলে ২-৩ লিটার নির্যাস তৈরি হয়। ১৮৫-২২৫ কেজি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কড়াই বা প্যানের আখের রস পরিশোধন করার জন্য ২-৩ লিটার বন ঢেঁড়সের নির্যাস লাগে। অর্থাৎ প্রতি কেজি রসে ১৫-২৫ গ্রাম নির্যাস দিতে হয়। অথবা ঘৃতকুমারীর উপরের সবুজ খোসা ছুরি দিয়ে তুলে ভেতরের পিচ্ছিল নির্যাস বের করতে হয়। প্রতি কেজি আখের রসে ১০-১৫ গ্রাম এই নির্যাস দিতে হয়। প্যান বা কড়াইয়ে আখের রস জ্বাল দিলে প্রচুর গাদ ওঠে। এই গাদ ছাকনা দিয়ে তুলতে হবে। এর পর বনঢেঁড়সের রস অথবা ঘৃতকুমারীর রস কড়াইয়ে ফুটন্ত আখের রসে মিশিয়ে আশানুরূপ রস পরিশোধন করা যায়। এই ভেষজ নির্যাস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই বরং উপকারী। কারণ এই নির্যাসে প্রোটিনজাতীয় পদার্থ থাকে। গাছ থেকে বাকল আলাদা করে বলের মতো গোল করে পেঁচিয়েও সরাসরি ফুটন্ত আখের রসে ব্যবহার করা যায়। রস ঘনীভূত হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত বাকল কড়াইয়ের উত্তপ্ত রসের মধ্যে কিছু সময় পরপর  নাড়া দিতে হবে। এতে আখের রসে বিদ্যমান ময়লা নির্যাসের সাথে জমাট হয়ে দ্বিতীয়বার গাদে পরিণত হয়ে ভেসে উঠবে, যা ছাকনা দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। রস ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রসের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় রস হাতল দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে হবে এবং চুলার আগুন কমাতে হবে। কাচের গ্লাসের পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানিতে গরম একটু রস ঢেলে দিলে যদি জমাট বাঁধে তাহলে বুঝতে হবে রস জ্বাল সম্পন্ন হয়েছে। চুলা থেকে রসের কড়াই নামিয়ে একটু ঠাণ্ডা করে ছাঁচের বা পাত্রে ঢেলে দিলে রস জমাট বেঁধে দানাদার গুড় তৈরি হবে। এই গুড়ের রস উজ্জ্বল সোনালি হলুদ হয়। হাইড্রোজ দেয়া গুড়ে হাইড্রোজের গন্ধ থাকে এবং রঙ হালকা সাদাটে বা অনুজ্জ্বল সোনালি হয়।
     স্বাস্থ্যসম্মত গুড় উৎপাদনের জন্য গুড় প্রস্তুতকারীদের কাছে ভেষজ নির্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। হাইড্রোজ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক আইন প্রয়োগ করতে হবে। খাদ্য ভেজাল বিরোধী অভিযানের মধ্যে গুড়ও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাজারের হাইড্রোজ মিশ্রিত গুড় বিক্রেতাদের জরিমানা করতে হবে। ভোক্তাদেরও হাইড্রোজ মিশ্রিত গুড় পরিহার করা উচিত।

 
 
কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ*
* কৃষি প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক, সহকারী অধ্যাপক, কৃষি শিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। মোবাইল : ০১৭১১-৯৫৪১৪৩
 

COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon